মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ । মায়ের ডায়েরী থেকে পাওয়া

কোহিনূর আক্তার খানম

আমাদের গ্রামটি ক্যান্টমেন্টের কাছাকাছি।। পাকিস্তানি সৈন্যগুলো না জানি কখন এসে পড়বে এই ভয়ে গ্রামের প্রতিটি মানুষ অস্থিরতার সহিত দিনাতিপাত করছে। ক্যান্টনমেন্ট হতে মাত্র ৪ কিলো পথ আমাদের ললিতাদহ গ্রাম। ১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চ। সকাল থেকে খুব আতংকের সাথে দিন কাটালাম। সন্ধ্যায় আমার আব্বা (গ্রামের একজন প্রভাবশালী বিত্তবান ব্যক্তি) গ্রামের সকলকে বললো গ্রামে থাকা এখন আর নিরাপদ নয়।

বিশেষ করে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, তোকে আজ রাতে গ্রাম ছাড়তে হবে। আমি কেঁদে কেটে অস্থির। কেননা আমার স্বামী কুষ্টিয়ার চাকুরীস্থলে যুদ্ধরত। কেমন আছে, কোথায় আছে? তাছাড়া আমার শিশু বাচ্চাদের নিয়ে কোন অচিন গাঁয়ে যাব? কোথায় থাকবো, কী খাওয়াবো, কী খাবো?

আমার আব্বা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, “জানোয়ারের দল, হানাদার পশুরা যেভাবে ক্ষেপেছে, ইজ্জত, জীবন রক্ষা করতে হলে আজ রাতেই তোদেরকে গ্রাম ছাড়তে হবে।”

আব্বার নির্দেশে রাত ২ ঘটিকায় গরু গাড়ি করে রওয়ানা দিলাম অজ পাড়াগাঁ দামোদরপুর গ্রামে। সঙ্গে করে প্রচুর চাল, ডাল, শুকনো খাবার দিয়ে দিলেন। আম্মা দাঁড়িয়ে ছিলেন নির্বাক হয়ে বিশাল বাড়ির ফটকের সামনে। মায়ের সেই স্নেহ মাখা মুখখানি আজো মনে পড়ে। ভাবিনি এটাই শেষ দেখা।

আমরা উঠেছিলাম আমাদের এক আত্নীয়ের বাড়িতে। আব্বা কয়েকদিন পর পরই আমাদের যেন খাবার দাবারের কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য ধান, চাল, ডাল সহ বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী, আসবাব পত্র প্রচুর পরিমানে গরু গাড়ি করে পাঠিয়ে দিতেন।

২১ শে এপ্রিল ১৯৭১, স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে সেই দিনগুলির কথা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে তাড়াহুড়া করে নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছি। চারিদিকে গুলির আওয়াজ, কী বিকট শব্দ! গ্রামের সকলেই আতংকিত। আগের দিন রাতে আমার স্বামী আমাদের অনেক খোঁজাখুঁজি করে দেখতে এসেছেন।

ললিতাদহ গ্রামের স্বনামধন্য ধনী ব্যক্তি আমার বাবা। গ্রামের মানুষগুলির সুখ-দুঃখের সাথী, বিমর্ষ হয়ে বসে আছে আমাদের বাড়ীর সামনের বারান্দায়। গ্রামের একজন মৌলভী সাহেব এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “খান সাহেব কী ভাবছেন? আপনাকে এত বিমর্ষ লাগছে কেন?”

আব্বা বললেন, “অনবরত গুলির শব্দ, মনে হয় আর কেউই বাঁচবে না। হানাদার বাহিনীরা যেভাবে ক্ষেপেছে!” মৌলভী সাহেব বললেন, “গতরাতে আপনার বড় গুদামটির ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনগুলি লুটপাট হয়ে গেছে। আরো জানতে পারলাম আপনার দোকানগুলি পাক সৈন্যরা আগুনে পোড়াইয়া দিয়াছে। ওরা জানতে পেরেছে আপনার বড় জামাই আনোয়ার এবং আপনার বড় ছেলে সেলিম মুক্তিযুদ্ধে গেছে।”

আব্বা অস্থির হয়ে রওয়ানা দিলেন বাজার অভিমুখে। তাঁর সারা জীবনের অর্থ সম্পদ বুঝি সব তছনছ হয়ে গেল। যেতে যেতে শুধু মুখে বলতে ছিল-হায় আল্লাহ! হায় আল্লাহ! হায়নাদের দল কাউকেই বাঁচতে দেবে না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ৭ মাইল বাজারে পৌঁছে পরিস্থিতি দেখে গ্রামে ফিরে এসে উনার বাড়ির ছাদে উঠে  সকলকে চিৎকার করে বলতে লাগলো-”তোমরা সবাই গ্রাম ছেড়ে পালাও। হানাদার বাহিনী সামনের পথ দিয়ে গ্রামে ঢুকতেছে। শীঘ্রই বের হয়ে যাও।”

আমাদের বিশাল বাড়িতে ঢুকে দরজা জানাল বন্ধ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে মাকে বললেন, “চলো বের হয়ে পড়ি। আজ আর বাঁচার উপায় নাই।” আমার দাদীকে বললেন, মা আপনি দেলোয়ারের সাথে দামোদরপুর চলে যান। (দেলোয়ার আমার ছোট ভাই)।

আমাদের পাশের গ্রাম ডহর পাড়া নামক গ্রামে আমার বাবা-মা গিয়ে অবস্থান করছিলেন মাত্র। সেখানে গিয়ে মাকে কী যেন জিজ্ঞেস করে তৎক্ষণাৎ আবার গ্রামের অভিমুখে রওয়ানা দিলেন। খালের উপর উঠে গ্রামের সুজা মিয়া নামের একব্যক্তির মৃতদেহ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। পাশে তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন হানাদার পশুরা কখন গুলি করলো? তিনি সজোরে কেঁদে বললেন, এইতো কতক্ষণ আগে। গ্রামের অনেক লোককে মেরেছে। ভাই সাহেব, আপনি ও ভাবী কেহই যাবেন না। আপনি আমাদের গ্রামের মাথা, আপনাকে ওরা মেরে ফেলবে।

আব্বা আম্মা দুজনই সুজা মিয়াকে উত্তর মুখে মাথা ঠিক করে দিলেন এবং গ্রামের ভিতর রওয়ানা হলেন।

আব্বা আমাদের বাড়ীর পিছন দিক দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করছে আর সেই মুহূর্তে খুব জোরে একটা বাঁশি বেজে উঠলো। আর চিৎকার দিয়ে দুইজন পাক সৈন্য এসে আব্বার দুই বগলের তলা হাত দিয়ে ধরে চিৎকার করে বললো “বাঙ্গালী খান মিল গিয়া।” টেনে হিছঁড়ে নিয়ে গেল আমাদের কাঁঠাল বাগানে। আমার মা কেঁদে কেঁদে কত আকুতি মিনতি করে বললো-তোমরা যা চাও তাই দেব আমার স্বামীকে মেরো না।

ওরা রাইফেলের বাট দিয়ে জোরে চেপে মাকে সরাইয়া দেয়। আমার মা দৌঁড়ে এসে আমার আব্বাকে জড়াইয়া ধরে, কেঁদে হানাদারদের নিকট জীবন ভিক্ষা চায়। কে শুনে কার কথা। মুহূর্তে লম্বা গোঁফওয়ালা, চিৎকার করে মেলাশিয়া সৈন্য এসে কয়েক রাউন্ড গুলি চালালো আমার আব্বা, আমার মায়ের বুকে। একটা গুলি আমার আব্বার ডান কান দিয়ে ঢুকে বাম কান দিয়ে বের হয়ে গেল আর সেটা গিয়ে লাগলো আমার মায়ের পেটে। আমার বাবাকে মৃত অবস্থায় বেনেট দিয়ে খুচিয়ে তারা উল্লাস করেছিল।

স্তব্ধ হয়ে গেল সব। সারা গ্রাম চারদিকে হাহাকার ললিতাদহ গ্রামের খান সাহেব আর মিসেস খান মারা গেছেন পাক সেনাদের গুলিতে। আমি তখন অজপাড়া গাঁয়ে। বুধবার দিবাগত সারারাত বাবা-মার লাশ কাঁঠাল বাগানে পড়েছিল।

আমার স্বামী অনেক খুঁজে বের করলেন আমরা দমোদরপুর গ্রামে আছি। আগের দিন রাতে এসেছেন আমাদেরকে দেখতে। এরই মধ্যে উনি নায়েব সুবেদার ফিরোজ খানের নেতৃত্বে যশোরের বিখ্যাত যুদ্ধ মান্দারতলা এবং দুলাল মুন্দিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এসেছেন।

দামোদরপুরে  যখন আব্বা আম্মার মৃত্যু খবর পৌঁছলো, আমি শুনেই জ্ঞান হারালাম আর সেই জ্ঞান ফিরল দুদিন পর। আমার স্বামীও আব্বা আম্মার শহীদ হওয়ার খবর শুনে হতভম্ব হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। জ্ঞান ফিরে তিনি ছুটছেন গ্রামের পাশে আব্বা মাকে সমাধি করবেন বলে। তাকে ঐ গ্রামের লোকেরা দিলেন না আসতে। কারণ তাকে পাক সেনারা হন্যে হয়ে খুঁজছেন। আমার দেবরসহ অন্য লোকজন কোন রকমে পরদিন আমার আব্বা ও মাকে বুকে টিনের ছানি দিয়ে কবর দিয়েছেন।

চারদিন পর (২৫শে এপ্রিল) আমার স্বামী কয়েকজন ছেলেকে বুঝিয়ে ওপাড়ে (কোলকাতায়) রওয়ানা হলেন। সেদিনের স্মৃতি-তার চলে যাওয়ার পথে আমি তাকিয়ে আছি। আমার ও সন্তানদেরতো আর কেহই নাই এ জগতে। আমার সন্তানরা হাউমাউ করে কেঁদে বুক ফাটায়। অনেক কষ্টে তাদের বুঝাইয়া রাখার চেষ্টা করলাম।

এদিকে যে বাড়িতে আমার আব্বা জীবিত থাকাকালীন ধান, ডাল, চাল, আসবাবপত্র এই গ্রামের কিছু আত্নীয়ের বাসায় রেখে ছিলেন তারা এখন এগুলো আত্নসাৎ করতে চায়। মনে হলো তারা আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।

এহেন অবস্থা দেখে আমি আমার শোকাহত দাদিকে নিয়ে নিজ গ্রামে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। কয়েকদিন পর হঠাৎ করে রওয়ানা দিলাম। গরু গাড়ি করে ২০ মাইল পথ অতিক্রম করতে কত যে কষ্ট হয়েছে তার বর্ণনা দেওয়া ক্ষুদ্র পরিসরে অসম্ভব। বাড়িতে ঢুকে দেখি দামী দামী আসবাবপত্র কিছুই নাই। এমনকি গোয়ালের গরুগুলি পর্যন্ত নাই! সবই লুটপাট হয়ে গেছে। কোন রকমে গুছাইয়া গাছাইয়া সংসার যাত্রা শুরু করলাম।

সপ্তাহে দু তিন দিন রাজাকারেরা আসত আমাদের বাড়িতে, গ্রামে। হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল, চাল, ডাল দামী দামী জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যেত। কিছু বললেই ধমক দিত, হুমকি দিত। নানান রকম গালিগালাজ করতো। সব কিছু ধৈর্য্য সহকারে সহ্য করতাম। কতবার গুলির মুখ থেকে ফিরে এসেছি তা লিখে শেষ করা যাবে না এই স্বল্প পরিসরে। স্মৃতিতে যতটুকু আছে তার কিছু অংশ শেয়ার করছি।

পিতৃ মাতৃ হারা আমি, আমার বয়স তখন মাত্র ২৪। স্বামী মুক্তিযুদ্ধে, চার সন্তানের জননী। সন্তানদের পরিচর্চা বাদ দিয়ে ওপাড়ে খবর দেওয়া নেওয়া আরম্ভ করলাম। রাতে আসত অপেক্ষমান মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের সাথে আলাপ করে খবরাখবর নিয়ে কাজে নেমে পড়তাম।

 ওপাড় থেকে আসা আমার স্বামীর চিরকুট অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশনা দেওয়া, বিপদমুক্ত এলাকায় অস্ত্র সামলে রাখা, তাদের অস্ত্র পৌঁছাইয়া দেওয়া, পথ চিনিয়ে নিয়ে যাওয়া, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা ছিল আমার মূল কাজ। তাছাড়া মানিকদির নায়েব সুবেদার ফিরোজ খানের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতাম। আমার কার্যপ্রণালী তাকে জানাতাম। তাঁর নির্দেশনাগুলি কার্যকর করার চেষ্টা করতাম।

কতবার যে বাড়ি থেকে পালিয়েছি বাঁচার জন্য তার কোন হিসাব নাই। দীর্ঘ নয় মাস পর যুদ্ধের অবসান হলো। চারিদিকে জয়ের ধ্বনি-জয় বাংলা, জয় বাংলা। বাবা মাকে হারিয়ে আমি যেন অন্ধকারে ছিলাম। জয়ধ্বনির শ্লোগানে আমাকে যেন নতুন এক আলোর আভাস, নতুন এক সূর্য উদিত হলো সারা বাংলায়। এ যেন এক নতুন পৃথিবী, সবুজের মেলা, স্বর্গভূমি। স্বজন হারাও ভুলে গেল তাদের শোক দুঃখ, বেদনা।

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি আমার মুক্তি সংগ্রামী স্বামী ফিরে আসবে। আমার ৯ মাস মুক্তি সংগ্রামের কাহিনী বলব। প্রতিদিনের দুঃসাহসী অভিযান কিভাবে করেছি তার বর্ণনা দিব। আমার অপেক্ষার সময় ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ হতে লাগলো। কত মুক্তিযোদ্ধারা আসছে কিন্তু আমার স্বামীর দেখা নাই। দিন দিন আমার মনোবল ভেঙ্গে পড়ছিল। তবু আশা ছাড়িনা। আল্লাহ এত নির্দয় হতে পারেন না। বাবা মাকে নিয়েছেন কিন্তু আমার স্বামী…না এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারছি না।

একসময়ে আমি অস্থির হয়ে অসুস্থ হয়ে গেলাম। ২৫শে ডিসেম্বর ১৯৭১ বিকাল বেলায় আমার ছোটভাই এসে বললো বড় বু, দুলাভাই এসেছে। আমি নির্বাক হয়ে চেয়ে আছি সেই মানুষটির দিকে। আমি চিনতে পারছি না দাঁড়ি গোফ, জীর্ণ শীর্ণ এক লোক। এগিয়ে এসে আমায় বললো চিনতে পারছ না? আমি আনোয়ার। আমি হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, তুমি! তোমার শরীরের এমন অবস্থা কেন? তিনি কেঁদে উঠে জড়িয়ে ধরে বললেন, তোমাদের দেখব, আমি বেঁচে থাকব, এটা ভাবতে পারিনি। বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি অবিশ্বাস্য। আল্লাহর কাছে হাজারো শোকর।

উনার কাছে শুনলাম নায়েব সুবেদার ফিরোজ খানের নেতৃত্বে মান্দারতলা যুদ্ধে অংশগ্রহন এবং পরবর্তীতে দুলাল মুন্দিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণের কথা। পরবর্তীতে কোলকাতায় ট্রেনিং নেওয়া এবং পরবর্তীতে একটা যুদ্ধে আহত হয়ে অনেক দিন অচেতন ছিলেন। এরপর জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে দেশে চলে আসেন।

আমার স্বামী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর কর্মস্থলে যোগদান করেন। উনার বদলী হলো ঢাকায়। আমি সন্তানদের সহ উনার কর্মস্থলে চলে এলাম। ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার স্বামীর কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। একবার উনি আমাকে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করাতে নিয়ে গেলেন এবং বললেন আমি যে আমার বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন “আজ থেকে আমি তোর বাবা আর মা।“ সেই কথাটা আমার মনে হৃদয় ছুঁয়ে গেল।

৭৪ এ আমার স্বামীর বদলী হলো নোয়াখালীর সেনবাগে। এভাবে বদলীজনিত কারণে আমাদের বিভিন্ন থানায় অবস্থান করতে হয়েছে। ৭৫ এর পর আমাদের জীবন আরো কঠিন হয়ে পড়ল। আমার স্বামীর দোষ ছিল উনি আওয়ামীলীগ সমর্থক, মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেউ কিছু বললে উনি সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করতেন। তাঁর চাকুরী জীবনের বেশির ভাগ সময় খাগড়াছড়ি, বান্দরবন এইসব জায়গা থেকে চাকুরি করতে হয়েছে।

এহেন অনাচার, অবিচার দেখে আমি আমার ছাত্র জীবন উন্মোচন করলাম। উন্মুক্তভাবে রাজনীতিতে ঢুকে পড়লাম এবং জিয়ার রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা, মিথ্যার প্রতিবাদ, মৌলবাদীদের কুসংস্কার, ফতোয়া, দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে কুটুক্তি এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করা নানা রকম দেশদ্রোহিতা, খালেদা জিয়ার অশালীন কথাবার্তার প্রতিবাদ করা ছিল আমার বক্তৃতার এজেন্ডা।

আর সেজন্যই আমার স্বামীর প্রমোশন হয়নি তিনবার। একবার এক সচিব বলেই ফেললেন, আপনার স্ত্রী আওয়ামীলীগ করেন, তিনি নাকি নোয়াখালী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী, আর আপনি করেন চাকুরী! আপনার স্ত্রী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন, আপনার চাকুরী থাকে কী করে? আপনি প্রমোশনের আশা করেন কী করে?

অনেক কষ্ট করে অবশেষে চাকুরি হতে (খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি থেকেই) ১৯৯৫ সালের মে মাসে অবসর গ্রহণ করেন। তাঁকে পেনশনের টাকা উঠানোর জন্য অনেক কষ্ট করে লক্ষীছড়িতে যেতে হতো।

অসমাপ্ত কাহিনী

বিঃদ্রঃ আমার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান ২০০৪ সালে। উনার মুখ থেকে এবং আমাদের দেখা উনার জীবনের কঠিন সময়গুলো নিয়ে পরবর্তীতে লিখব। এখানে উনার ডায়েরী থেকে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণটাই তুলে ধরা হয়েছে।

ছবিঃ ইন্টারনেট

3 thoughts on “মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ । মায়ের ডায়েরী থেকে পাওয়া”

  1. চোখে পানি চলে এলো। খুব সুন্দর করে লিখেছেন আপনার মা। মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্যগ্যুলো যেন চোখের সামনে ভাসছিল!

    আপনার বাবা ও মায়ের মুক্তিযুদ্ধ হয়তো কারো কখনোই জানা হবে না। তবে তাদের এমন আত্মত্যাগের জন্যই আমরা এমন স্বাধীন একটি দেশ পেয়েছি।

    মহান আল্লাহ আপনার শহীদ দাদা ও দাদিকে বেহেশত নসীব করুন। আমিন।

    Reply
  2. Osombhob sahosi chhilen apnar maa, shikar kortei hobe. Unader songram er kachhe amader kono koshter e tulona hoyna. Allah apnar nana, nani, baba, maa sobaike jannatul ferdous naseeb korun. Ameen.

    Reply

Leave a Comment